লেনিনের সামাজিক শভিনিজম সমালোচনার পুনরুত্থান, অনলাইন আলোচনায় উত্তেজনা
ভিউস নাউ | ২২ এপ্রিল, ২০২৫
এক শতাব্দীরও বেশি সময় পরে, ভ্লাদিমির লেনিনের সামাজিক শভিনিজমের সমালোচনা আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এই বিতর্ক ১৯১৫ সালে তাঁর লেখা সোশ্যালিজম অ্যান্ড ওয়ার প্রবন্ধের একটি উদ্ধৃতিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর "ইন ডিফেন্স অফ কমিউনিজম" (@id_communism) নামের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা পোস্টটি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহাসিক বিভাজনগুলো নিয়ে নতুন করে চিন্তার সুযোগ তৈরি করেছে।
লেনিনের উদ্ধৃতিটি ছিল:
"সামাজিক শভিনিজম হল ‘নিজের দেশের প্রতিরক্ষা’র ধারণার প্রতি আনুগত্য। এই ধারণা থেকে যুদ্ধকালে শ্রেণি সংগ্রামের প্রত্যাখ্যান আসে [...] সামাজিক শভিনিজম মূলত ‘নিজের’ সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়াদের সুবিধা, লুণ্ঠন ও সহিংসতার সুরক্ষা, যা সকল সমাজতান্ত্রিক নীতির সম্পূর্ণ বিশ্বাসঘাতকতা।”
প্রসঙ্গের গুরুত্ব
এই উদ্ধৃতির পুনরুত্থান এমন একটি সময়ে ঘটেছে যখন বৈশ্বিক জাতীয়তাবাদ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য নতুন মাত্রা পেয়েছে। লেনিনের বক্তব্য অনেকের কাছে জাতীয়তাবাদের প্রভাবের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংহতির আহ্বান বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তবে অনেকেই বলছেন, লেনিনের সময়ের প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান পৃথিবীর রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “লেনিনের চিন্তাধারা গুরুত্বপূর্ণ, তবে ২০২৫ সালের পৃথিবী ১৯১৫ সালের পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা কি সত্যিই এই চিন্তাগুলোকে আজকের বাস্তবতায় প্রয়োগ করতে পারি?”
ঐতিহাসিক বিভাজন
লেনিনের কৌটস্কির (কার্ল কৌটস্কি) সঙ্গে বিরোধ সমাজতান্ত্রিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কৌটস্কি যেখানে ধীরে ধীরে সংস্কারের পক্ষে ছিলেন, লেনিন সেখানে সরাসরি বিপ্লবের কথা বলেছেন। আজকের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনেও এই বিতর্ক প্রতিফলিত হয়—বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এবং যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে।
ইতিহাসবিদ ড. এলেনা পেত্রোভা বলেন, “লেনিনের সামাজিক শভিনিজমের সমালোচনা আমাদের অনুগত্য এবং নীতির মধ্যে ভারসাম্যের প্রশ্ন তোলে। আজকের বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে জাতীয় স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক সংহতির মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র।”
অনলাইন প্রতিক্রিয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টটির ব্যাপক ভাইরাল হওয়া এটি কতটা প্রাসঙ্গিক তা বোঝায়। অনেকেই লেনিনের আন্তর্জাতিকতাবাদের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন, অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জটিলতার সমাধানে শতাব্দী-পুরোনো ধারণাগুলো প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
একজন মন্তব্য করেন, “লেনিন সঠিক ছিলেন—জাতীয়তাবাদ শ্রমিক শ্রেণিকে বিভক্ত করে। তাঁর সমালোচনা আজও প্রাসঙ্গিক।” অন্য একজন লিখেছেন, “এই চিন্তাধারা শক্তিশালী, তবে আধুনিক পৃথিবীর জন্য আমাদের নতুন কৌশল প্রয়োজন। পুরনো কাঠামোর উপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়।”
ভবিষ্যতের পথ
সোশ্যাল মিডিয়া যখন ঐতিহাসিক বিতর্কগুলোকে পুনর্জীবিত করছে, তখন লেনিনের সামাজিক শভিনিজমের সমালোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে: বর্তমান বিশ্বের সংহতি এবং সংগ্রামের প্রকৃত রূপ কেমন হওয়া উচিত?
যদিও বিতর্ক লেনিনের চারপাশে কেন্দ্রীভূত, এটি বৃহত্তর একটি প্রশ্ন উত্থাপন করে: আন্তঃসংযোগের এই যুগে, যেখানে বিভাজন তীব্র, আমরা কি প্রকৃত আন্তর্জাতিক সংহতির মডেল গড়তে পারি?