সফদর হাশমি জন্মদিন স্মরণে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের সাংস্কৃতিক উৎসব
আজ সকালে দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের সেল কো-অপারেটিভ কমপ্লেক্সের কবিগুরু সরণিতে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ, জনবাদী লেখক শিল্পী সংঘ এবং গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের যৌথ উদ্যোগে সফদর হাশমির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। প্রভাতী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে সাহিত্য, শিল্প এবং সংস্কৃতিপ্রেমীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ পরিবেশকে মুখরিত করে তোলে।
সফদর হাশমি: সংগ্রামী চেতনার মূর্ত প্রতীক
সফদর হাশমি ছিলেন এক সংগ্রামী শিল্পী ও নাট্যকর্মী, যিনি গণতান্ত্রিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে লড়াই করেছিলেন। ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি এক পথনাটকের সময় তিনি ঘাতকদের হাতে নিহত হন। তাঁর আদর্শ, সাহস, এবং সংগ্রামী চেতনাকে স্মরণ করেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
কর্মসূচি
আবৃত্তি:
পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের ইস্পাত শাখার শ্যামল ব্যানার্জি ও সন্ধ্যা মণ্ডলের প্রাণবন্ত আবৃত্তি উপস্থিত দর্শকদের মনে সফদরের সংগ্রামের প্রতিধ্বনি তুলে ধরে। আবৃত্তি "ওরা ভুলে যায় একহুল শিল্পীর শরলে আরও লাখ লাখ শিল্পীর দুষ্ম হয়" শিরোনামে সফদরের সংগ্রামী চেতনার মর্মার্থকে জীবন্ত করে তোলে।
বক্তব্য:
পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি শ্রী কানাই বিশ্বাস বলেন, "সফদর হাশমি কেবল একজন শিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক সামাজিক বিপ্লবের প্রতীক। তাঁর আদর্শ আমাদের প্রতিদিন নতুন করে লড়াইয়ের প্রেরণা জোগায়।"
পথনাটক:
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ও লহরীর উদ্যোগে মঞ্চস্থ হয় "থার্ড আই", যা আর জি কর হাসপাতালের একটি নৃশংস ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে। নাটকটি শুধু সামাজিক ন্যায়বিচারের বার্তা দেয়নি, বরং দর্শকদের বিবেককে জাগ্রত করেছে।
গান ও সঙ্গীত পরিবেশনা:
ইস্পাত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সুমনা ও সুতপার পরিবেশিত সংগীত দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়। সংগীতের প্রতিটি কথায় সফদরের সংগ্রামী জীবনের চিত্র ভেসে ওঠে।এছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘের পক্ষ থেকে ভজন চক্রবর্তী, কাকলি মন্ডল এবং তবলায় সঙ্গত করেন তুহিন দত্ত।
নাটক:
ইস্পাত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সদস্যদের পরিবেশিত নাটক "সুম্ম বিচার" সফদরের সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। নাটকটি তুলে ধরে যে, "আক্রমণ কোনো নতুন শব্দ নয়। কিন্তু প্রতিরোধের ভাষা স্তব্ধ করা যায় না।"
সংহতির মিছিল:
স্মরণসভার একটি বিশেষ অংশ ছিল নাটক সংহতির মিছিল। অংশগ্রহণকারীরা একত্রে কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছেন: "সফদর হাশমি অমর রহে!"। নাটকটি গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সংস্কৃতির প্রতি মানুষের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।
বিশেষ বক্তব্য ও ধন্যবাদসূচক ঘোষণা
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শ্রী সীমান্ত তরফদার। তিনি বলেন, "সফদর হাশমি কেবল একজন শিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের সময়ের এক আলোকবর্তিকা। সংকটের মুহূর্তে তিনি আমাদের লড়াইয়ের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।"
অনুষ্ঠানের লক্ষ্য
স্মরণসভার উদ্দেশ্য কেবল সফদর হাশমির জীবন ও সংগ্রামকে স্মরণ করা নয়, বরং সমাজে সংস্কৃতি, শিল্প, ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। নতুন প্রজন্মের মধ্যে সফদরের সংগ্রামী চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই মূল্যবোধের পথে এগিয়ে চলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা।
#সফদর_হাশমি #পথনাটক #সংগ্রামী_চেতনা #গণতান্ত্রিক_আন্দোলন #সংস্কৃতি