তীব্র তাপপ্রবাহে ভারতে বিদ্যুৎ চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি , এক তৃতীয়াংশের কারণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ: রিপোর্ট
দুর্গাপুর, পশ্চিমবঙ্গ: সম্প্রতি প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক শক্তি বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘এম্বার’-এর একটি রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের গ্রীষ্মের মাসগুলিতে (এপ্রিল থেকে জুন) ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা ১০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিপুল বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহের দরুন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার (এসি) ব্যবহার বৃদ্ধি। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় এক তৃতীয়াংশই এসেছে এসির ব্যবহারের কারণে।
বিশ্বের অন্যান্য অংশেও তাপপ্রবাহ বিদ্যুৎ চাহিদার উপর প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ চাহিদার বৃদ্ধির প্রায় এক পঞ্চমাংশ তাপপ্রবাহের কারণে হয়েছে, যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে নির্গমনের পরিমাণ ১.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অস্বাভাবিকভাবে বেশি তাপমাত্রা বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বছর-ভিত্তিক বিদ্যুৎ চাহিদার বৃদ্ধির প্রায় ৩০ শতাংশের জন্যই দায়ী এসির ব্যবহার। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাপপ্রবাহের দিনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এসির ব্যবহার আরও বাড়ার কারণে ভারতে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের গ্রিডের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে ভারত সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
১. শক্তি দক্ষতা নীতি (Energy Efficiency Policies): ভারত সরকার বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং ভবনের জন্য স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড লেবেলিং (S&L) প্রোগ্রাম এবং এনার্জি কনজারভেশন বিল্ডিং কোড (ECBC)-এর মতো নীতি প্রয়োগ করছে। সিলিং ফ্যান এবং এসির জন্য বাধ্যতামূলক স্টার রেটিং চালু করার ফলে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো সম্ভব হচ্ছে।
২. শীতল ছাদ (Cool Roofs): শীতল ছাদকে একটি সাশ্রয়ী এবং কার্যকর সমাধান হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এটি তাপ শোষণ কমিয়ে শীতলীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস করে। আহমেদাবাদের মতো শহরগুলিতে ইতিমধ্যেই সম্প্রদায়-ভিত্তিক শীতল ছাদ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
৩. পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সং integration: ভারত ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়Renewable Energy Integration) উপর জোর দিচ্ছে।
৪. চাহিদা সাড়া দান কর্মসূচি (Demand Response Programs): কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নির্ভর স্মার্ট এনার্জি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাহকদের আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা কমানোর জন্য পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালানো হচ্ছে।
৫. গ্রিডের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি (Grid Resilience): গ্রীষ্মের মাসগুলিতে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা সামাল দিতে গ্রিড অটোমেশন এবং রিয়েল-টাইম মনিটরিং সিস্টেমে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপগুলি বিদ্যুতের গ্রিডের উপর চাপ কমাতে এবং ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। তবে, তাপপ্রবাহের তীব্রতা এবং এসির ব্যবহার যেভাবে বাড়ছে, তাতে আরও কার্যকর এবং দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।