আফ্রিকার আকাশে বাজছে বিষাদের সুর! মালি আর আলজেরিয়ার মধ্যে আকাশপথে উড়ানের উপর নেমে এলো কঠিন নিষেধাজ্ঞা। দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের বাঁধন যেন ছিঁড়ে গেল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনায়। আলজেরিয়া অভিযোগ করেছে, তাদের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল মালির একটি নজরদারি ড্রোন, আর সেই অপরাধে সেটিকে গুলি করে নামানো হয়েছে।
কিন্তু মালি এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, ড্রোনটি যখন ভেঙে পড়ে, তখন সেটি মালির আকাশসীমার প্রায় সাড়ে নয় কিলোমিটার ভেতরে ছিল, আলজেরিয়ার সীমান্ত থেকে বেশ দূরে। এই ঘটনার পরেই যেন আগুনের হলকা লাগলো দুই দেশের মধ্যে। মালিও সঙ্গে সঙ্গে তাদের আকাশপথ আলজেরিয়ার সমস্ত উড়ানের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে মালি ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার’ মতো গুরুতর অভিযোগও এনেছে, যদিও এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।
এই ঘটনার জল বহুদূর গড়িয়েছে। মালি, বুরকিনা ফাসো এবং নাইজার – এই তিন বন্ধু দেশ আলজেরিয়া থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা আলজেরিয়ার এই কাজকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে তীব্র নিন্দা করেছে। শুধু তাই নয়, তারা এটিকে ‘পুরো অঞ্চলের বিরুদ্ধে আগ্রাসন’ এবং দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিপন্থী বলেও উল্লেখ করেছে।
অন্যদিকে, আলজেরিয়াও বসে নেই। তারাও মালি ও নাইজার থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের ফিরিয়ে নিয়েছে এবং বুরকিনা ফাসোতে তাদের নতুন রাষ্ট্রদূতের যোগদানের তারিখ পিছিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনা যেন গোটা সাহেল অঞ্চলে এক গভীর সংকটের ঘনঘটা তৈরি করেছে।
একসময় আলজেরিয়া এই অঞ্চলে শান্তির দূত হিসেবে কাজ করেছে, বিশেষ করে মালির অভ্যন্তরীণ সংঘাত মেটানোর চেষ্টায় তাদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি বদলেছে। মালিতে পরপর দুটি সামরিক অভ্যুত্থান এবং দেশটির ঐতিহ্যবাহী মিত্র ফ্রান্সের থেকে দূরে সরে গিয়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়া – এই সমস্ত ঘটনা ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে জটিল করে তুলেছে। আলজেরিয়া এর আগেও মালি কর্তৃক রুশ ভাড়াটে সেনা ও সীমান্ত এলাকায় সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
আকাশপথে উড়ানের এই নিষেধাজ্ঞা শুধু যে দুটি দেশের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবে তাই নয়, এর ফলে অর্থনৈতিক ও logistical ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এমনিতেই অশান্ত সাহেল অঞ্চলে এই নতুন সংকট আরও অস্থিরতা বাড়াতে পারে। এখন দেখার, কূটনৈতিক পথে এই বরফ গলাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় কিনা, আর যদি হয়ও, তা কতটা ফলপ্রসূ হবে। তবে এই মুহূর্তে, মালি আর আলজেরিয়ার আকাশে যেন এক গভীর বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে।