উত্তাল পথে চালনা: অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা এবং নীতিগত অনিশ্চয়তার মধ্যে আরবিআই-এর সুদ হার হ্রাস
৯ই এপ্রিল, ২০২৫ – রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আরবিআই) মুদ্রা নীতি কমিটির (এমপিসি) আজ ঘোষিত রেপো রেট ২৫ базиস পয়েন্ট কমিয়ে ৬% করার সিদ্ধান্ত ভারতীয় অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এসেছে। মুদ্রাস্ফীতির নরম হওয়া এবং তেলের দাম কমার পটভূমিতে এই পদক্ষেপ বৃদ্ধির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেও, এটি বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা এবং দেশীয় নীতি পছন্দের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কিত অন্তর্নিহিত উদ্বেগকেও তুলে ধরে। বর্তমান গভর্নরের অধীনে এই পরপর দ্বিতীয়বার সুদ হার হ্রাস অর্থনৈতিক গতি বজায় রাখা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও দেশীয় কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের উত্তাল জলরাশি পার করার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষার প্রতিফলন।
এমপিসি-র "সহায়ক অবস্থান"-এর পরিবর্তন একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এটি স্পষ্টভাবে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণকে অগ্রাধিকার দেয়, যা সাম্প্রতিক অতীতে মুদ্রাস্ফীতি-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একটি স্পষ্ট প্রস্থান। এই পরিবর্তন এমন এক সময়ে এসেছে যখন ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনা, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে, বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা তৈরি করেছে। আরবিআই-এর এই পদক্ষেপকে এই বাহ্যিক ধাক্কা থেকে ভারতীয় অর্থনীতিকে রক্ষা করার একটি পূর্ব-প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যা ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য ঋণ নেওয়াকে সস্তা করে তুলবে এবং তাত্ত্বিকভাবে বিনিয়োগ ও খরচকে উৎসাহিত করবে।
তবে, এই সিদ্ধান্ত তার জটিলতা মুক্ত নয় এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান নীতি কাঠামোগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উত্থাপন করে। যদিও নরম মুদ্রাস্ফীতি আরবিআই-কে এই ধরনের হ্রাসের সুযোগ করে দিয়েছে, তবে এই হ্রাসের অন্তর্নিহিত কারণগুলির সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এটি কি কেবল বিশ্বব্যাপী পণ্যের অনুকূল দামের ফল, নাকি এটি দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদাকেও প্রতিফলিত করে, যা অর্থনীতির গভীরে কাঠামোগত সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে?
উপরন্তু, এই হার হ্রাসের সময়টি ভারতের অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কিত তীব্র বিতর্ক এবং মাঝে মাঝে অনিশ্চয়তার সময়ের সাথে মিলে যায়। সরকার উচ্চাভিলাষী বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এবং বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে, তবে এই ব্যবস্থাগুলির কার্যকারিতা এবং সংহতি নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। সমালোচকরা নীতি বাস্তবায়নের অসঙ্গতি, কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির অভাব এবং অবকাঠামোগত বাধা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও শ্রম আইনের মতো ক্ষেত্রগুলিতে গভীর কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার মতো মৌলিক সমস্যাগুলি সমাধানে অবিরাম সংগ্রামকে তুলে ধরেন।
আরবিআই-এর এই হার হ্রাস, তাৎক্ষণিক তারল্য এবং সম্ভাব্যভাবে অনুভূতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হলেও, এটিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায় না। এর প্রভাব সরকারের একটি সহায়ক এবং অনুমানযোগ্য নীতি পরিবেশের উপর নির্ভরশীল হবে। নিয়ন্ত্রক অনিশ্চয়তা বা ভবিষ্যতের নীতি পরিবর্তনের উদ্বেগের কারণে যদি ব্যবসা বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করে, তবে ঋণের কম খরচ বাস্তব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনুবাদ নাও হতে পারে। একইভাবে, যদি বৃহত্তর অর্থনৈতিক উদ্বেগ বা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বৃদ্ধির স্পষ্টতার অভাবে ভোক্তাদের আস্থা কমে যায়, তবে ভোগের উপর এর প্রভাব সীমিত হতে পারে।
হার হ্রাসের পরেও কিছু বিশ্লেষকের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনার বিষয়টি এই অন্তর্নিহিত উদ্বেগগুলিকে তুলে ধরে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভারতীয় অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলি ঋণের খরচের বাইরেও বিস্তৃত এবং একটি আরও ব্যাপক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন।
উপসংহারে বলা যায়, আরবিআই-এর সর্বশেষ হার হ্রাস একটি কঠিন বিশ্ব পরিবেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করার অঙ্গীকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, এর কার্যকারিতা অভ্যন্তরীণভাবে বৃহত্তর নীতি আখ্যান এবং একটি স্থিতিশীল, অনুমানযোগ্য এবং প্রবৃদ্ধি-ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরি করার সরকারের ক্ষমতার সাথে যুক্ত হবে। অন্তর্নিহিত কাঠামোগত সমস্যাগুলি সমাধান করা এবং নীতিগত সংহতি নিশ্চিত করা এই আর্থিক নীতি শিথিলতাকে টেকসই এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে অনুবাদ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এমপিসি-র সক্রিয় অবস্থান একটি সুযোগের জানালা খুলে দিয়েছে, তবে বর্তমান অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা এবং ভারতকে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে চালিত করার দায়িত্ব এখন পরিপূরক রাজস্ব এবং কাঠামোগত নীতির উপর বর্তায়।