“চেন্নাই থেকে হাওড়া—করমণ্ডল এক্সপ্রেসের জানালায় ধরা পড়ল জীবনের রঙিন অধ্যায়: খীরাইয়ের পথে আবেগঘন সফরের গল্প ভাগ করে নিলেন নিউজ ব্লগার শঙ্কর পাল”
সংবাদ প্রতিবেদন |
চেন্নাই থেকে হাওড়ার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ছুটছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। জানালার পাশে বসে শঙ্কর পাল, একজন পেশাদার নিউজ ব্লগার, যিনি সংবাদ লেখেন শুধু তথ্যের খাতিরে নয়, লেখেন হৃদয়ের স্পর্শ দিয়ে। কিন্তু আজকের সফর ছিল আলাদা — কারণ এই যাত্রায় তিনি খুঁজে পেলেন এমন এক অনুভূতির সাগর, যা বছরের পর বছর স্মৃতির মতো রয়ে যাবে।
হঠাৎ করেই ট্রেন থামল খীরাই স্টেশনে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই ছোট্ট স্টেশনকে বহু যাত্রী শুধুই একটি ‘প্যাসিং পয়েন্ট’ বলে মনে করেন। কিন্তু শঙ্করের চোখে ধরা পড়ল অন্য ছবি। জানালার কাঁচের ওপার থেকে যেন এক রঙিন রাজ্য হাতছানি দিচ্ছে — অসংখ্য ফুলে মোড়া বিস্তীর্ণ মাঠ, গাঁদা, ডালিয়া, গ্ল্যাডিওলাস, অ্যাস্টার আর গোলাপের গন্ধে ভরে উঠেছে বাতাস।
“আমার মনে হচ্ছিল, ট্রেন থেমে যাক। আমি যেন নেমে পড়ি এই ফুলেদের রাজ্যে,” — আবেগে বলেন শঙ্কর।
“খীরাই তো শুধুই এক জায়গা নয়, এটা একটা অনুভব। এটা সেই চিত্র, যেখানে প্রকৃতি নিজের ভাষায় বলে— জীবন রঙহীন হতে পারে না।”
শীতকালের শুরুতেই (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) খীরাইয়ের রূপ চূড়ান্তে পৌঁছে যায়। এখানে প্রতিটি খেত যেন জ্যামিতির ছকে সাজানো রঙিন ক্যানভাস। স্থানীয় কৃষকরা ফুল চাষে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কেউ জানেন না তাদের নাম, কিন্তু তারা প্রতিদিন প্রকৃতিকে শিল্পে রূপান্তরিত করে চলেছেন।
শঙ্কর আরও বলেন, “আমার ক্যামেরা এই দৃশ্যগুলো ধরতে চাইলেও, মন যেন আরও কিছু বেশি ধারণ করে ফেলছিল — একটা আবেগ, একটা ভালোবাসা, একটা চেনা অচেনা যোগাযোগ।”
খীরাই স্টেশন থেকে নামলেই ছোট্ট বাজার, যেখানে বিক্রি হয় ফুলের তৈরি মুকুট, মালা, টোকা। মাত্র ২০ টাকায় এখানকার শিশুরা আপনাকে সাজিয়ে দেবে রাজকুমারীর মতো। ফটোশ্যুট করতে আসা পর্যটকের ভিড় বাড়ছে দিনদিন।
“আমি একজন সংবাদকর্মী, কিন্তু এই জায়গাটায় এসে মনে হল, আমি একজন পাঠক — প্রকৃতির লেখা এক চিঠির পাঠক,”— বলেন শঙ্কর।
তিনি জানান, খীরাই থেকে কিছু কিলোমিটার দূরেই জনাবার নামের আরেকটি গ্রামেও রয়েছে একইরকম ফুলের খেত। সেখানেও যেতে পারেন, যদি সময় থাকে। হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে খীরাই কিংবা পাঁশকুড়া স্টেশন, সেখান থেকে টোটো কিংবা অটো করলেই পৌঁছে যাবেন এই স্বপ্নপুরীতে।
এই সফরের শেষে শঙ্করের উপলব্ধি:
“ট্রেন তো গন্তব্যে পৌঁছায় ঠিকই, কিন্তু এই ধরনের মুহূর্তগুলো আমাদের পৌঁছে দেয় হৃদয়ের গভীরে, যেখানে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর গল্পগুলো লেখা থাকে — রঙ, ফুল, গন্ধ আর স্মৃতির অক্ষরে।”
আপনিও যদি এমন কোনও স্মরণীয় সফরের সাক্ষী হয়ে থাকেন, আমাদের জানান। কারণ প্রতিটি সফরের মধ্যে লুকিয়ে থাকে এমন এক গল্প, যা শুধুমাত্র পথ নয়, মানুষকে স্পর্শ করে।
– শঙ্কর পাল, এক সংবাদকর্মীর হৃদয় থেকে লেখা খীরাইয়ের প্রেমপত্র