দেওচা-পাচামীতে কয়লা খনির বিরুদ্ধে সিউড়িতে বিক্ষোভ: মাটি, মানুষ ও পরিবেশ রক্ষার ডাক
সিউড়ি, ১১ এপ্রিল: দেওচা-পাচামী কয়লা খনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে আজ সিউড়ির রাজপথ জুড়ে শোনা গেল মাটি ও মানুষের রক্ষার আহ্বান। আদিবাসী জনগণের কান্না আর পরিবেশবিদদের সতর্ক বার্তা মিলে যেন এক প্রতিবাদের ঢেউ তুলে দিল। হাজারো মানুষের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হলো—"এই মাটি, এই জঙ্গল আমাদের, এটাকে বিক্রি হতে দেব না।"
বিক্ষোভের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী আন্দোলনের নেতা রামচন্দ্র ডোম, যাঁর কণ্ঠে ছিল আদি ভূমির হারানোর বেদনা। তিনি বলেন,
"আমাদের পূর্বপুরুষদের রক্তে সিক্ত এই মাটি। এটাকে তুলে দিলে আমাদের অস্তিত্ব মুছে যাবে। আমরা কিছুতেই এই জমি ছেড়ে দেব না। দেওচা-পাচামী আমাদের জীবন, আমাদের ভবিষ্যৎ।"
বাম নেত্রী দেবলীনা হেমব্রমের কথায় স্পষ্ট ছিল জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের অবজ্ঞার চিত্র। তিনি বলেন,
"সরকার মুনাফার লোভে আমাদের জীবিকা ও পরিবেশ ধ্বংস করতে চাইছে। কিন্তু আমরা জানিয়ে দিতে চাই, এই লড়াই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আমরা হারব না।"
আদিবাসীদের আর্তনাদ ও ভূমি রক্ষা কমিটির প্রতিজ্ঞা
ভূমি রক্ষা কমিটির নেতৃত্ব বলেন,
"এই প্রকল্পে শুধু আমাদের জমি নয়, আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের পরিচয়, সব কিছু ধ্বংস হবে। সরকার বলে ক্ষতিপূরণ দেবে, কিন্তু ক্ষতিপূরণ দিয়ে কি আমাদের শিকড় ফেরত দেবে? আমাদের জল, জঙ্গল, জমি কি টাকা দিয়ে কেনা যায়?"
জীবনের চেয়ে প্রকল্প বড়?
বিক্ষোভের মিছিলে এক বৃদ্ধা আদিবাসী কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
"এই মাটি আমার সন্তানের মতো। আমাদের এখান থেকে তাড়ালে আমরা কোথায় যাব? এই গাছপালা ছাড়া আমরা বাঁচব না।"
তাঁর কথাগুলো যেন পুরো আন্দোলনের প্রাণ। প্রকল্পের ফলে মাটি আর জলের যে ধ্বংস হবে, তা নিয়ে পরিবেশবিদরা আবারও সতর্ক করেছেন।
"মাটি শুকিয়ে যাবে। জলস্তর পড়ে যাবে। কৃষি শেষ হয়ে যাবে। আদিবাসীরা শুধু নয়, গোটা এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
স্মারকলিপি ও প্রতিজ্ঞা
বিক্ষোভ শেষে প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। সেখানে দাবি জানানো হয়, অবিলম্বে এই প্রকল্প বন্ধ করতে হবে এবং আদিবাসী ও সাধারণ মানুষের জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে।
বিক্ষোভের মিছিল শেষে রামচন্দ্র ডোম উচ্চারণ করলেন,
"এই লড়াই আমাদের অস্তিত্বের। দেওচা-পাচামী শুধু একটি জমি নয়, এটি আমাদের জীবন। আমরা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।"
আজ সিউড়ির আকাশে শুধু প্রতিবাদ নয়, শিকড়ের মাটি বাঁচানোর আকুতি শোনা গেল। এই আন্দোলন যেন মাটির গন্ধে মিশে থাকা মানুষের হৃদয়ের ডাক।