দুর্গাপুর, পশ্চিমবঙ্গ: দুর্গাপুরে আজ সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি (AIDWA)-র উদ্যোগে নারী শহীদ দিবস পালিত হয়েছে। স্থানীয় ইস্পাত ২ আঞ্চলিক কমিটির আয়োজনে এই দিনের কর্মসূচিতে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন ও একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নেন। মিছিলটি চন্ডীদাস মার্কেট পর্যন্ত পরিক্রমা করে এবং সেখানে এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই বিশেষ দিনটি পালনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে AIDWA-র স্থানীয় নেতৃত্ব বলেন, ১৯৪৯ সালের ২৭শে এপ্রিল কলকাতার রাজপথে বন্দিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছিলেন বহু নারী। সেই মিছিলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে শহীদ হন আমিয়া, প্রতিভা, লতিকা ও গীতা নামের চার সাহসী মহিলা এবং তাঁদের সাথে শহীদ হন যুব কমরেড বিধান ব্যানার্জী। তাঁদের আত্মত্যাগ নারী অধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে এক কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। তাঁদের স্মৃতিকে অমলিন রাখতেই প্রতি বছর এই দিনটিকে নারী শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি।
নেতৃত্ব আরও বলেন, শহীদ এই নারীরা শুধুমাত্র বন্দিদের মুক্তির দাবিতেই সরব ছিলেন না, তাঁরা একটি শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। তাঁদের সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আজকের নারী শহীদ দিবসের প্রধান অঙ্গীকার। দুর্গাপুরের আজকের এই কর্মসূচি সেই অঙ্গীকারেরই বহিঃপ্রকাশ।
নারী শহীদ দিবসের প্রেক্ষাপট
১৯৪৯ সালের ২৭শে এপ্রিল কলকাতার রাজপথে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, তা তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নারী সমাজের দৃঢ় মনোবল ও সংগ্রামী চেতনাকে তুলে ধরেছিল। বন্দিদের মুক্তি এবং একটি fairer সমাজের দাবিতে মহিলারা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তাঁদের এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ শুধু অমানবিকই ছিল না, বরং নারী আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার একটি অপচেষ্টাও ছিল। কিন্তু সেইদিনের শহীদারা তাঁদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে নারী সমাজকে আরও শক্তিশালী করে গিয়েছেন।
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি (AIDWA)
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি (AIDWA) ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-র একটি সহযোগী সংগঠন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সমিতি নারীর অধিকার রক্ষা, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং মহিলাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য লড়াই করে আসছে। AIDWA দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মহিলাদের সংগঠিত করে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলে। নারী নির্যাতন, পণপ্রথা, শিক্ষার অভাব এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই সংগঠন সর্বদা সোচ্চার।
ভারতে নারী অধিকার আন্দোলনের গুরুত্ব
ভারতে নারী অধিকার আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং তার পরবর্তী সময়েও নারীরা তাঁদের অধিকারের জন্য লড়াই করে এসেছেন। নারী ভোটাধিকার আন্দোলন, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকারের দাবি, এবং পারিবারিক ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম – এই সবই নারী অধিকার আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১৯৪৯ সালের নারী শহীদ দিবস সেই দীর্ঘ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই দিনের শহীদারা প্রমাণ করে গেছেন যে নারীর মুক্তি ও অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করতেও তাঁরা পিছপা নন। তাঁদের এই আত্মত্যাগ আজও নারী সমাজকে অনুপ্রাণিত করে এবং একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। দুর্গাপুরের আজকের নারী শহীদ দিবসের পালন সেই অনুপ্রেরণারই প্রতিফলন।